সুনামগঞ্জের ছাতকে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে করোনার কারণে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে ছাতক-দোয়ারার সব হাটবাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ছাতকবাজারসহ এখানের বাজারগুলোতে কয়েক লাখ টাকার স্থানীয় জাতের লিচু বিক্রি হয়। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চানপুর, বড়গল্লা, কচুদাইড়, রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরমেশ্বরীপুর, বীরসিংহপুর, সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা ও আলীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ছাতক -দোয়ারাবাজারসহ এখানের হাটগুলোতে কয়েক লাখ টাকার স্থানীয় লিচু বিক্রি হয়। পুরো মৌসুমে এখানের চাষিরা কোটি টাকার লিচু বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন: লিচু দিয়ে রূপচর্চা
লিচু চাষি মানিকপুর গ্রামের আরব আলী, গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, রাজারগাও গ্রামের আব্দুল মালিক, চানপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক লিচু চাষে জড়িয়ে এখানের শতাধিক চাষি এখন স্বাবলম্বী। লিচুর ভালো বাজারমূল্য রয়েছে এখানে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে।
জানা গেছে, ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার।
ব্রিটিশ জমিদার আমল থেকেই নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর ও আশপাশ এলাকার টিলাভূমিতে লিচু চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লিচুর চাষ করা হচ্ছে। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর পরিধি বেড়েই চলছে।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড খরায় মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তিপদ রায় চৌধুরীর কাছারিবাড়ি ছিল মানিকপুর গ্রামে। এ কাছারি বাড়িতে জমিদারের লোকজন কয়েকটি লিচুগাছ রোপন করেছিলো। কাছারিবাড়িতে শতবর্ষী তিনটি লিচু গাছ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছারিবাড়িতে বহু আগে গ্রামবাসী জামে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মূলত ওই কাছারিবাড়ি থেকেই গ্রামজুড়ে লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়ে। দিনে-দিনে আশপাশ গ্রামসহ বর্তমান দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়ে। গত ক'বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশি লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সরকারী সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন জানান, লিচু চাষিদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারি সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। চাষিরাও ভালো বাজার মূল্য পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: লিচু গাছের আমটি ছিঁড়ে নেয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক মেম্বার
টিলাবেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।